• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ঘূর্ণিঝড়ে মেঘনা উপকূলে জনপদ বিধস্ত, বেড়েছে ভাঙন 

প্রকাশ:  ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:৫৯
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় জনপদ বিধস্ত হয়েছে। বসতবাড়ি, বাগান ও চলাচলের রাস্তার দুইপাশে উপড়ে পড়ছে ব্যাপক গাছপালা। এতে করে অনেক ঘরবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা উপরে গাছ উপড়ে পড়ে। এছাড়া মেঘনা নদীর ভাঙন বেড়েছে দ্বিগুণ। গাছ উপড়ে পড়ে দিনব্যাপী মানুষের চলাচলের বাধা হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৭ টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ও কমলনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন পরিদর্শন করে চোখে পড়ে গাছ উপড়ে পড়ার দৃশ্য ও নদী ভাঙনের ভয়াবহ রূপ। জেলা শহরের আবিরনগর, লাহারকান্দি, ভবানীগঞ্জ, পিয়ারাপুর, বাঞ্ছানগর, সমসেরাবাদ, আয়েব আলী পোল, মজুপুরসহ বিভিন্ন এলাকা।

এছাড়াও কমলনগর উপজেলার চরমাটিন, মুন্সীর হাট, নাজিরগঞ্জ, নবীগঞ্জ। রায়পুর উপজেলার মোল্লার হাট, চরবংশি, চরকাচিয়া, চর বাদাম। রামগতির রামদয়াল, মজিবনগর, আজাদ নগর ও চর আব্দুল্লাহ।

এসব এলাকায় ছোট-বড় গাছ উপড়ে পড়ে দুইদিন ধরে লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে বিকেল ৫টার পর থেকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলার দুই একটি এলাকায় বিদ্যুৎ চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

এদিকে ঘুর্ণিঝড় ও মেঘনার তীব্র জোয়ারে উপকূলীয় এলাকায় পানি বন্দী হয়ে দুর্ভোগে জীবন-যাপন করছেন অসংখ্য পরিবার। প্রতিটি মুহুর্তে বেড়েছে মেঘনা নদীর ভাঙন।

সদর উপজেলার কালিরচর গ্রামের বাসিন্দা এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাদের বাড়ির আশপাশে ব্যাপক গাছপালা ভেঙে গেছে। এতে করে অনেকের ঘরবাড়ি ও ফসলির জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

একই উপজেলার পিয়ারাপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গতরাতে তার নির্বাচনী ওয়ার্ডে এক অসহায় নারীর বসতঘরের ওপরে বিশাল একটি গাছ উপড়ে পড়ে। এতে করে ওই নারী মাকসুদা বেগমপর দুই সন্তান রয়েছে। দুইটি সন্তান প্রতিবন্ধি। ভেঙে যাওয়া ঘর কিভাবে সেই মেরামত করবে, এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা রয়েছে এ অসহায় নারী।

আবিরনগর গ্রামের অটোরিকশা চালক মো. সেলিম বলেন, তার রান্নাঘর ও টয়লেটের পাশে দুইটি বড় উপড়ে পড়ে তার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এমন বাতাস ও তুফান দেখেননি বলে জানান।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার (১০নং ওয়ার্ড) দক্ষিণ মজুপুর এলাকার বাসিন্দা ও দক্ষিণ তেহমুনী বাসস্ট্যান্ডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর জানান, দুইদিন ধরে বিদ্যুৎ নাই। এতে ঘরে ফ্রিজ ও সন্তানদের লেখা পড়ার চরম ক্ষতি হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সদস্য ও শিক্ষানবিশ আইনজীবি আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় সঠিক সময় অফিসে মেইল করতে পারিনি। এছাড়াও সকল থেকে কোথায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি নেটওয়ার্কের কারণে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে যেমন কোনোভাবেই নিউজ পাঠানো যায়নি, তেমনি আজ আদালতে বহু মানুষ মামলা দায়ের করতে পারেননি।

কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা খুরশিদা বেগম জানান, গতরাতে নদীর গর্জন আর স্রোত ছিলো ভয়াবহ। রাত ১টার দিকে যখন জোয়ার আসে, তখন হুটহাট করে ঘরে ভেতরে পানি ঢুকে পড়ে। চৌকির ওপর চৌকি দিয়ে, ঘরের মালামাল রেখে, রাস্তার ওপর গিয়ে অপেক্ষায় থাকি। কখন পানি নেমে যাবে। ভোররাতে পানি নামতে শুরু করে। তখন আমাদের নিঃশ্বাস এসেছে। হয়তো এ জোয়ারে আমাদের সবকিছুই হয়নি, তবে জোয়ারে পানি আমাদের অনেককিছু ভাসিয়ে নিয়েছে।

মেঘনার তীরবর্ত্তী এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, জীবনের অধিক সময় নদীর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি আমরা। গতরাতের জোয়ারে আমরা কেউ মরে যায়নি, তবে নদীর স্রোত আমাদের মেরে গেছে। আমাদের হাঁস-মুরগি মারা গেছে। আমাদের রান্নাঘর ও অনেকগুলো গাছ উপড়ে পড়ছে।

মো. আবুল মতিন নামে একব্যক্তি জানান, আমাদের ডাকাতিয়া (ব্রিজ) সেতু ভেঙে দুইটি উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমাদের একটাই দাবি টিকসই বেড়িবাঁধ।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

লক্ষ্মীপুর,ভাঙন,বিধস্ত,ঘূর্ণিঝড়,উপকূল,জনপদ,মেঘনা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close